Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ইঁদুর দমনের কলাকৌশল

ইঁদুর একটি চতুর ও নীরব ধ্বংসকারী স্তন্যপায়ী প্রাণী। ইঁদুর প্রাণীটি  ছোট  হলেও  ক্ষতির  ব্যাপকতা  অনেক। এরা  যে  কোনো  খাদ্য  খেয়ে  বাঁচতে  পারে।  যে  কোনো  পরিবেশে  মানিয়ে  নিতে  পারে। অল্প  বয়সে  বাচ্চা  দিতে  পারে। ১৭০০টি ইঁদুরজাতীয় প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে ২২টির অধিক ক্ষতিকারক ইঁদুরজাতীয় প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত  ইঁদুর  আমাদের  উৎপাদিত  ফসলকে  নষ্ট  করছে। ক্রমবর্ধমান হারে  খাদ্যের  প্রয়োজনে দেশে বর্তমানে  এক  ফসলের  পরিবর্তে  বহুবিধ  ফসলের  চাষাবাদ  হচ্ছে।  এর  ফলে  ইঁদুর  মাঠেই  খাদ্য  পাচ্ছে। বাংলাদেশে ইঁদুরের আক্রমণে বছরে আমন ধানের শতকরা ৫-৭ ভাগ, গম ৪-১২ ভাগ, আলু ৫-৭ ভাগ, আনারস ৬-৯ ভাগ নষ্ট করে। গড়ে মাঠ ফসলের ৫-৭ শতাংশ এবং গুদামজাত শস্য ৩-৫ শতাংশ ক্ষতি করে।  ইঁদুর শতকরা ৭ থেকে ১০ ভাগ সেচ নালাও নষ্ট করে থাকে। সেটা ফসলের উৎপাদনের ওপর প্রভাব ফেলে। ইরির ২০১৩ সালের এক গবেষণা  মতে, এশিয়ায় ইঁদুর বছরে যা ধান-চাল খেয়ে নষ্ট করে তা ১৮ কোটি মানুষের এক বছরের খাবারের সমান। আর শুধু বাংলাদেশে ইঁদুর ৫০-৫৪ লাখ লোকের এক বছরের খাবার নষ্ট করে।
ইঁদুর  শুধু  আমাদের  খাদ্যশস্য  খেয়ে  নষ্ট  করে  না  বরং  তা  কেটে কুটে  অনেক  ধ্বংস  করে।  এদের  মলমূত্র,  লোম  খাদ্য  দ্রব্যের  সাথে  মিশে  টাইফয়েড,  জন্ডিস,  চর্মরোগ  ও  ক্রিমিরোগসহ  ৬০  ধরনের  রোগ  ছড়ায়।  প্লেগ  নামক  মারাত্মক  রোগের  বাহক  হচ্ছে  ইঁদুর।  ইঁদুর  মাঠের  ও  ঘরের  শস্য  নষ্ট  ছাড়াও  বৈদ্যুতিক  তার, টেলিফোন  তার  ও  কম্পিউটার  যন্ত্র  কেটে  নষ্ট  করে। এছাড়া  বড় সড়ক  বাঁধ,  রেললাইনে  গর্ত  করে  তা  ক্ষতিগ্রস্ত করে।  বন্যার  পানি  ঢুকে  তা  নষ্ট  হয়।  এ জন্য এর ক্ষতির পরিমাণ পরিসংখ্যানগতভাবে নির্ণয় করা কঠিন। কাজেই ফসল ও সম্পদের ক্ষতি রোধ, জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও দূষণমুক্ত পরিবেশের স্বার্থে ইঁদুর সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে ক্ষেত-খামার, বসতবাড়িসহ সর্বত্র ইঁদুরমুক্ত করার লক্ষ্যে ইঁদুর নিধনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিতে হবে।
ইঁদুরের উপস্থিতির লক্ষণ
কর্তনের শব্দ, নখের দ্বারা আঁচড়ানো শব্দ, কোনো কিছু বেয়ে ওঠার অথবা নামার শব্দ, ক্ষণস্থায়ী চিচি শব্দ, চলাচলের  রাস্তায় মল, নোংরা দাগ, পায়ের ছাপ, ইঁদুর যাতায়াত পথের সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি দ্বারা ইঁদুরের উপস্থিতি বোঝা যায়। ইঁদুরের বাসা এবং তার আশপাশে ছড়ানো ছিটানো খাদ্যাংশ দেখে ইঁদুরের উপস্থিতি জানা যায়। ইঁদুরের গন্ধ এবং পোষা প্রাণির লাফঝাপ বা অদ্ভুত আচরণ বা উত্তেজনা ইঁদুরের উপস্থিতি নির্দেশ করে।
ইঁদুরের স্বভাবই হলো কাটাকুটি করা। কাঠের গুঁড়া, দরজা, জানালা, ফ্রেম, গুদামের জিনিসে ক্ষতির চিহ্ন দেখে এর আক্রমণের লক্ষণ বুঝা যায়।  এছাড়া আক্রান্ত আনারস, নারিকেল, আখ, ঘর বা গুদামে রক্ষিত ধান, চাল, গম রাখার বস্তা কাটা দেখে, ইঁদুরের খাওয়া ধানের তুষ দেখে এদের উপস্থিতি বোঝা যায়। ঘরে বা তার পাশে ইঁদুরের নতুন মাটি অথবা গর্ত, ফসলের মাঠে, আইলে ও জমিতে ছোট রাস্তা, বাঁধ, পুল প্রভৃতির পাশে গর্ত দেখে ইঁদুরের উপস্থিতি ও সংখ্যা নির্ণয় করা যায়।
ইঁদুর দমনের স্থান, সময় ও ফসলের স্তর
১. ধানের জন্য বীজতলায় এবং ধানের কুশি স্তর থেকে ধানের থোড় হওয়ার আগে পর্যন্ত।  এ সময় ইঁদুরের সংখ্যা কম থাকে এবং মাঠে খাদ্যও কম থাকে। আমন ফসলে আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত;
২. গমের জন্য থোড় হওয়ার আগে, ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে;
৩. সবজি, বাদাম, আলু ফসলের ক্ষেত্রে ফসল লাগানোর সময় এবং ফসল ধরার আগে দমন ব্যবস্থাপনা নিতে হবে;
৪. আখের ক্ষেত্রে চারা রোপণের আগে মাটি ও আইলে দমন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে;
৫. নারিকেল, আম, জাম্বুরা, আনারস ও অন্যান্য ফলের বেলায় ফল ধরার আগ থেকে কর্তনের আগ পর্যন্ত গাছের চারপাশে ও আক্রান্ত ফলের পাশে দমন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে;
৬. গভীর ও অগভীর নলকূপের নালায়।
ইঁদুর  দমন  ব্যবস্থাপনা
ইঁদুর  একটি  অত্যন্ত  ক্ষতিকর  প্রাণী। একটি মাত্র  পদ্ধতি  দ্বারা  ইঁদুর  দমন  করা বাস্তবে  সম্ভব  নয়।  ইঁদুর  দমন  পদ্ধতি সঠিক  স্থানে,  সঠিক  সময়ে  ও  সঠিকভাবে  প্রয়োগ  করতে  হবে।
ইঁদুর মারার কলাকৌশল  
ইঁদুর সাধারণত দুইভাবে দমন করা যায়।
১. অরাসায়নিক দমন ব্যবস্থা ও ২. রাসায়নিক দমন ব্যবস্থা।
অরাসায়নিক দমন ব্যবস্থা
১. ঘরবাড়ি ও ক্ষেতের আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা;
২. গুদামঘর পরিষ্কার রাখা এবং গুদামের দরজার ফাঁক দিয়ে যেন ইঁদুর ঢুকতে না পারে তেমন ব্যবস্থা করা। এছাড়া গুদামঘরের ছিদ্র বা ফাটল সিমেন্ট দিয়ে ভালোভাবে বন্ধ করে দেয়া;
৩. ধান, গম ইত্যাদির গোলা বা ডোল সরাসরি মাটিতে না রেখে মাচার ওপর ঘরে রাখা এবং মাচার প্রতিটি পিলার মসৃণ টিন দিয়ে এমনভাবে জড়িয়ে দেয়া যেন ইঁদুর তা বেয়ে উঠতে না পারে। গুদামের শস্য টিনের পাত্রে সংরক্ষণ করা;
০৪. নারিকেল গাছের গোড়ায় টিনের মসৃণ পাত এমনভাবে জড়িয়ে দেয়া যেন ইঁদুর তা বেয়ে উঠতে না পারে;
৫. ইঁদুর ভক্ষণকারী প্রাণীকে সংরক্ষণ করা;
৬. ইঁদুরের গর্ত খুঁড়ে, গর্তে পানি ঢেলে ইঁদুরকে  বের করে পিটিয়ে মারা;
৭. ইঁদুরের গর্তে মরিচ পোড়ার ধোঁয়া দিয়ে ইঁদুরকে মারার ব্যবস্থা করা;
৮.বিভিন্ন প্রকার ফাঁদ পেতে ইঁদুর মারার ব্যবস্থা নেয়া।
রাসায়নিক দমন পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে ইঁদুরকে দমনের জন্য দুই ধরনের ইঁদুরনাশক ব্যবহার করা হয়। যথাÑ
১. তীব্র বিষ (Acute poison) : তীব্র বিষ খাওয়ার সাথে সাথে ইঁদুর মারা যায়। তীব্র বিষ হচ্ছে জিংক ফসফাইড। তীব্র বিষ ব্যবহারের কিছু কিছু অসুবিধা আছে তা হচ্ছে, জিংক ফসফাইড দ্বারা তৈরিকৃত বিষটোপ ইঁদুর পরিমিত মাত্রায়  খাওয়ার আগে অল্প কিছুটা মুখে দিয়ে পরখ করে ও অসুস্থ হয়ে পড়ে কিন্তু মরে না। আবার পরিমিত মাত্রায় বিষটোপ খাওয়ার পর একসাথে অনেক ইঁদুর মারা যেতে দেখে বিষটোপের প্রতি অনীহা লক্ষ করা যায়।
২. দীর্ঘস্থায়ী বিষ (Chronic poison) দীর্ঘস্থায়ী বিষ খাওয়ার সাথে সাথে ইঁদুর মারা যায় না, ইঁদুর মারা যেতে ৫ থেকে ১৩ দিন সময় লাগে। দীর্ঘস্থায়ী বিষ দিয়ে তৈরিকৃত বিষটোপ ইঁদুর খাওয়ার পর ইঁদুরের রক্ত জমাট বাঁধার  ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায়, ফলে ইঁদুরের নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে ও ক্রমেই ইঁদুর দুর্বল হতে থাকে এবং ৫-১৩ দিনের মধ্যে ইঁদুর মারা যায়। দীর্ঘস্থায়ী বিষ প্রয়োগ করে অনেক ইঁদুর মারা সম্ভব। ৯০-১০০ শতাংশ ইঁদুর মারা যাবে (খুবই কার্যকর)। দমন খরচ বেশি। কারণ বেশি দিন বিষটোপ প্রয়োগ করতে হয়।
৩. ইঁদুরের গর্তে বিষবাষ্প প্রয়োগ করেও ইঁদুরকে মারা যায়। যথা- সাইনোগ্যাস, ফসটক্সসিন ট্যাবলেট।
বিষটোপ প্রয়োগ
১.ঘরে অথবা গুদামে অথবা দোকানে যদি গর্ত থাকে তবে নতুন গর্তের সম্মুখে পাত্রে বিষটোপ প্রয়োগ করতে হবে। যদি গর্ত না থাকে তবে ইঁদুরের সম্ভাব্য উপস্থিতির স্থানগেুলোতে বিষটোপ প্রয়োগ করতে হবে;
২.বিষটোপ একই পাত্রে একই স্থানে কমপেক্ষ ৩-৪ রাত্র রাখতে হবে;
৩. গুদামে অথবা ঘরে ১০ হাত পরপর নতুন গর্তের মুখে একটি বিষটোপ পাত্র রাখতে হবে;
৪. বিষটোপ পাত্র হিসেবে নারিকেলের খোলস, কলাগাছের খোলস, মাটির ছোট ছোট পাত্র, বাঁশ অথবা পাইপ ব্যবহার করা যেতে পারে;
৫. প্রতিটি পাত্রে ৫০-১০০ গ্রাম বিষটোপ প্রয়োগ করতে হবে;
৬. বহুমাত্রা বিষটোপের ক্ষেত্রে যতদিন ইঁদুর খাওয়া বন্ধ না করে ততদিন পাত্রে বিষটোপ রাখতে হবে;
৭. ঘরবাড়ি, গুদাম অথবা দোকানে কমপক্ষে ২০-৩০ দিন পরপর বিষটোপ প্রয়োগ করতে হবে।
৮. জিংক ফসফাইড বিষটোপ ঘন ঘন ব্যবহার করা উচিত না;
৯. গুদামে অথবা শিল্পকারখানায় ইঁদুরের উপদ্রব থাকলে স্থায়ী কয়েকটি বিষটোপ পাত্র রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বহুমাত্রা বিষটোপ প্রয়োগ করতে হবে;
১০.আনারস বাগানে ফল ধরার সময় ১২টি বিষটোপ পাত্র প্রতি একরে স্থাপন করতে হবে। প্রতি পাত্রে দীর্ঘমেয়াদি  ৫০ গ্রাম করে বিষটোপ প্রয়োগ করতে হবে। বিষ পাত্র ফল তোলার আগে পর্যন্ত আনারস বাগানে রাখতে হবে;
১১.নারিকেল গাছের মাথায় বিষটোপ ছোট পলিথিনে করে সুঁতা দিয়ে মুখ বেঁধে রাখতে হবে। নারিকেল বাগান হলে প্রত্যেক গাছে বিষটোপ প্রয়োগ না করে প্রতি ১০টি নারিকেল গাছের জন্য একটি গাছে বিষটোপ মাসে একবার প্রয়োগ করতে হবে।
সঠিক স্থানে এবং সঠিক পদ্ধতিতে বিষটোপ প্রয়োগ না করলে দমন ব্যবস্থা ততটা কার্যকর হয় না।
বিষটোপ ও ফাঁদ দ্বারা ইঁদুর দমন ব্যবস্থা ব্যর্থ হওয়ার কারণ
১. বিষটোপ পাত্র একই স্থানে কম দিন রাখলে। ইদুর যতদিন খায় তত দিন খাওয়াতে হবে;
২. অতি অল্পসংখ্যক বিষটোপ পাত্র প্রয়োগ করলে এবং বিষপাত্র বিষটোপবিহীন রাখলে;
৩. নতুন স্থান থেকে ইঁদুরের আগমন ঘটলে;
৪. বিষটোপ পাত্র সঠিক স্থানে না রাখলে;
৫. টোপ যদি পুরনো, খারাপ ও মোল্ডযুক্ত হয়;
৬. ফসলের থোড় ও পাকা অবস্থায় দমন ব্যবস্থা করা হলে এ সময় মাঠে প্রাকৃতিক খাদ্য বেশি থাকে;
৯. ফাঁদের সংখ্যা কম হলে;
১০.ফাদে ইঁদুর পড়ার পর তাড়াতাড়ি না সরালে;
১১. একটি দমন ব্যবস্থা বারবার প্রয়োগ করলে;
১২. একমাত্রা বিষটোপ বারবার প্রয়োগ করলে।
জৈবিক পদ্ধতিতে ইঁদুর দমন
শিয়াল, বেজি, বনবিড়াল, গুঁইসাপ, পেঁচা ইত্যাদি প্রাণী ইঁদুর মেরে থাকে। সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এদের সংরক্ষণ ও বংশবিস্তারের সুযোগ করে দিয়ে প্রাকৃতিকভাবেই ইঁদুর দমন করতে হবে।
সাবধানতা
ইঁদুর মারা বিষ খুবই মারাত্মক। বিষ প্রয়োগের সময় পানাহার বা ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। কাজের শেষে হাত মুখ এবং শরীরের অনাবৃত অংশ ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। মানুষ বা পশু খাদ্যের সাথে ইঁদুরের বিষ পরিবহন বা গুদামজাত করা এবং বিষের খালি প্যাকেট অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
কৃষক  পর্যায়ে  ইঁদুর  দমন
বাংলাদেশের কৃষক ১০-১২ ধরনের ফাঁদ  ব্যবহার  করে  ইঁদুর  ধরে  থাকেন।  যেমন- বাঁশের  তৈরি  ফাঁদ,  কাঠের তৈরি ফাঁদ, ইঁদুর ধরার  লোহার তৈরি  কল ইত্যাদি। এছাড়া  বাসাবাড়িতে  ইঁদুর  ধরার জন্য গ্লুবোর্ড  ব্যবহার  করে  ছোট  বড় ৫-১০টি  ইঁদুর  মারা  যায়। জুম ফসল রক্ষার  জন্য  বাঁশের  বেড়া  দিয়ে  বাঁশের  ফাঁদ  পাতা  হয়।  দক্ষিণ  অঞ্চলে  জোয়ারের সময় টেঁটা দিয়ে  ইঁদুর  মারা  যায়। জোয়ারে  ধান  ফসল ডুবে  গেলে  ইঁদুর  কচুরিপানা, হোগলা  গাছে ও মাঠে আশ্রয়  নিলে  তখন  সম্মিলিতভাবে  ইঁদুর দমন করা উচিত। ইঁদুর  মারার  প্রকৃত  বিষ হচ্ছে জিংক  ফসফাইড। কৃষক  এ  বিষ  বিভিন্ন খাদ্যের সাথে মিশিয়ে বিষটোপ তৈরি  করেন। খাদ্যের সাথে বিষ ২ শতাংশ  মিশ্রিত  না হলে ইঁদুর  খায়  না এবং  খেলেও মরে না। খাদ্য  হিসেবে  শুঁটকি, চিংড়ি, শামুক, কাঁকড়া ভালো  কাজ  করে। বাজারে  ল্যানির‌্যাট ও  ব্রমাপয়েন্ট  পাওয়া  যায়, যা ভালো কাজ করে। ৩ গ্রাম ওজনের অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের গ্যাসবড়ি  ইঁদুরের  গর্তে  দিয়ে  ভালোভাবেই  ইঁদুর দমন  করা  যায়।
সম্মিলিতভাবে  ইঁদুর  দমন
নিজের  বাড়ির ইঁদুর  নিজেকেই  মারতে  হবে। এটি  বাস্তব  কথা  কিন্তু  একা  ইঁদুর  দমন  করা  সম্ভব  নয়।  ইঁদুর  সমস্যা  একটি  সামাজিক  সমস্যা। সমাজের  সবার  সহযোগিতা ছাড়া ইঁদুর  দমন  সম্ভব  নয়। ইঁদুর  দমন  প্রযুক্তি  বিষয়ে  প্রশিক্ষণ  ও  উপকরণ  দিয়ে  সহায়তা ও  ইঁদুর  দমন  কর্মসূচির  জন্য  দক্ষ  জনশক্তি  গড়ে  তোলা  প্রয়োজন।

 

* উপপরিচালক (আইপিএম), উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫

 

শহর ও গ্রামের ইঁদুর দমনের কলাকৌশল

শহর ও গ্রামের ইঁদুর দমনের কলাকৌশল
ড. সন্তোষ কুমার সরকার

ইঁদুরকে মানুষ পছন্দ করে না, কিন্তু ইঁদুর মানুষকে পছন্দ করে। মানুষ এবং ইঁদুর একই ছাদের নিচে বাস করে। একই টেবিলে আহার করে। মানুষ ইঁদুরের বাসস্থান বনভূমি নষ্ট করে ইঁদুরকে তাদের সাথে থাকতে বাধ্য করেছে। মানুষ ইঁদুরের খাদ্য, বাসস্থান ও পানির জোগানদার। ইঁদুর যখন বনে থাকে তখন এরা ক্ষতিকারক প্রাণী নহে। মানুষ ফসলি জমিতে বিল্ডিং তৈরি করে শহর গড়ছে। ইঁদুরও দিনে দিনে শহর বাসি হচ্ছে। বর্ষাকালের আরম্ভে মাঠের ইঁদুর গ্রামের বসতবাড়িতে এবং শহরে আগমন ঘটে। এজন্য বর্ষাকালে গ্রামের বসতবাড়িতে ইঁদুরের সংখ্যা বেড়ে যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইঁদুরের সংখ্যা শহরে না গ্রামে বেশি? আমার মতে শহরে বেশি। কারণ শহরে মানুষের সংখ্যা বেশি, ইঁদুরও বেশি। শহরে সারা বছর ইঁদুরের খাদ্য, বাসস্থান ও পানির নিশ্চয়তা আছে। সারা বছরই ইঁদুরের বংশবিস্তার করার পরিবেশ বিদ্যমান। শহর বলতে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা শহরকে বিবেচনা করা হয়েছে। গ্রাম বলতে ফসলের মাঠ বাদে মানুষের বসবাসের ইঁদুরের স্থানকে বিবেচনা করা হয়েছে।
শহরের ইঁদুরের উপস্থিতির স্থান
যেখানে জনসাধারণের অবাধ প্রবেশ করার সুযোগ নেই, সেখানে বিপুল সংখ্যক ইঁদুরের উপস্তিতি পূর্বেও ছিল, বর্তমানেও আছে, ভবিষতেও থাকবে। বড় বড় শহরে বড় বড় দালানের একটিও ইঁদুর মুক্ত বিল্ডিং খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রতিটি বাসাবাড়িতে ও আঙ্গিনায় ইঁদুরের উপস্থিতি রয়েছে। এ ছাড়াও কাঁচাবাজারের মাছ-মাংস, চাল-ডাল ও সবজি, ফলমূল বিক্রয় এলাকাতে এবং খাদ্যশস্য পাইকারী বাজারে মাঠের কালো ইঁদুরের উপস্থিতি রয়েছে এবং প্রতিনিয়ত ক্ষতি করছে। মুরগির খামারে ও বাজারের বিক্রয় স্থানে মাঠের কালো ইঁদুরের উপস্থিতি রয়েছে। বিমান বন্দর ইঁদুরের অভয়াশ্রয় বলা যায়। সমুদ্র ও নদী বন্দরগুলোতে ইঁদুর দ্বারা ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
ইঁদুর মুক্ত কোনো স্থান কোনো শহরে নেই। শহরে বছরে ইঁদুর দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পদ ও জনস্বাস্থ্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যানগত বা গবেষণার কোনো তথ্য নেই। তবে নিশ্চিতভাবে বলতে পারি প্রতিবছর প্রত্যেকটি শহরে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ইঁদুর দ্বারা ক্ষতি হয়ে থাকে।
শহরে ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা
সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা মশা নিধনের প্রোগ্রামের মতো ইঁদুর দমনের কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। ইঁদুরের কারণে পানির অপচয় ও রোগবিস্তার এবং ড্রেনের ক্ষয়ক্ষতি এসব নিয়ন্ত্রণে সবাইকে গুরুত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। জনস্বাস্থ্যের গুরুত্বে বিবেচনায় ইঁদুর দমন প্রোগ্রাম অন্যান্য দেশের মতো সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা হতে নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান পেস্টকন্ট্রোল সার্ভিসের মাধ্যমে তেলাপোকা ও ইঁদুর দমন করে থাকে। সাধারণত ব্যক্তিগতভাবে বাসাবাড়ির ইঁদুর দমন করে থাকে। এ ছাড়াও অফিসে বা বাসাবাড়িতে ইঁদুরের ক্ষয়ক্ষতি না হলে কেউ ইঁদুর দমনের উদ্যোগ গ্রহণ করে না। সিঙ্গাপুরের অফিস বা বাসাবাড়ির আঙ্গিনায় ইঁদুরের উপস্থিতি পেলে শাস্তি প্রদানের আইন করা হয়েছে। এ আইনের উদ্দেশ্য প্লেগের মতো ছোঁয়াছে রোগের বিস্তার রোদ করা। আমাদের দেশেও অনুরূপ আইন করা প্রয়োজন।
শহরের ড্রেনের পাশে, ডাস্টবিনের গর্তের ইঁদুর ফসটক্সিন গ্যাস বড়ি প্রয়োগ করে দমন করা যাবে। প্রতি গর্তে একটি করে গ্যাসবড়ি প্রয়োগ করতে হবে। সিটিকর্পোরেশন ও পৌরসভা ওয়ার্ডভিত্তিক বছরের দুইবার ইঁদুর নিধন করতে হবে। বাসাবাড়ি, অফিসের ভিতর ইঁদুর দমনের গ্লুবোর্ড ব্যবহার করতে হবে। কারণ বিষটোপ ব্যবহার করলে তা খেয়ে এসির বা যন্ত্রপাতির ভিতর মরে থাকতে পারে এবং গন্ধ বাহির হবে। কেচিকল, তারের জীবন্ত ইঁদুর ধরার ফাঁদ ব্যবহার করেও ইঁদুর এবং চিকা মারা যায়। এক কক্ষে কম পক্ষে ৫-৬টি ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। ইঁদুরের উপস্থিতি যেমন- মলমূত্র বা পায়ের ছাপ, ক্ষতির চিহ্ন দেখামাত্র ইঁদুর মারার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। রান্না ঘরের খাবার ঢেকে রাখতে হবে। খাবার না পেলে ইঁদুর থাকবে না। নিচতলার বাহিরে দেওয়ালে ছোট বাক্সে ইঁদুরের বিষটোপ রাখলে ইঁদুর বিষটোপ খেয়ে মারা যাবে এবং বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করবে না বা উপদ্রব থাকবে না।
গ্রামে ইঁদুরের উপস্থিতির স্থান
গ্রামের প্রতিটি বসতবাড়িতে ইঁদুরের কমবেশি উপস্থিতি আছে। কত ইঁদুর আছে তার কোনো পরিসংখ্যানগত তথ্য নেই। আমাকে একজন কৃষক প্রশ্ন করেছিল যে, তাদের গ্রামে কতটি ইঁদুর আছে? আমি বলেছিলাম যতলোক বাস করে তার চেয়ে বেশি আছে। যদি কোথাও ইঁদুর চোখে পড়ে তবে ঐ স্থানে কমপক্ষে ৫টি ইঁদুর আছে। যতটি গর্ত আছে ততটি মাঠের কালো ইঁদুর রয়েছে। মাঠে পানি আসলে বিপুল সংখ্যক মাঠের কালো ইঁদুর গ্রামের উঁচু ভূমি, বসতবাড়িতে আসে এবং পানি চলে গেলে কিছু সংখ্যক ইঁদুর বসতবাড়িতে থেকে যায়। তাই বর্ষাকাল গ্রামের ইঁদুর দমনের উপযুক্ত সময়। এতে দুইটি উপকার হয় যথা : বসতবাড়িতে ইঁদুরের ক্ষয়ক্ষতি কম হয় এবং গ্রামের পাশে আমন ফসলের ক্ষতি কম হবে। বসতবাড়িতে মাঠের কালো ইঁদুর, গেছো ইঁদুর ও সলই ইঁদুরের উপস্থিতি বেশি রয়েছে। কৃষকের গোলাজাত শস্যের প্রায় ১০-১২% ক্ষতি করে। মাঠে কালো ইঁদুর মাটির ঘরে, উঠানে, খড়ের গাদায়, গরুর খাবার স্থানে বেশি গর্ত করে থাকে। এরা গরিবদের পছন্দ করে তাদের কাঁচা ঘরের জন্য আর ধনীদের পচ্ছন্দ করে খাদ্য শস্য বেশি থাকার কারণে। বসতবাড়ির সবজি যেমন- লাউ, চালকুমড়া, শসা এবং ফলমূলের বেশি ক্ষতি করে গেছো ইঁদুর ও মাঠের কালো ইঁদুর। ঘরের খাদ্যশস্য ও অন্যান্য জিনিসপত্রের ক্ষতি করে সলই ইঁদুর, গেছো ইঁদুর ও মাঠের কালো ইঁদুর।
গ্রামের ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা
কমিউনিটি অ্যাপ্রোচ : সাধারণত ব্যক্তিগতভাবে ইঁদুর দমন অথবা মেরে থাকে। এতে সফলতার পরিমাণ অত্যন্ত কম। দমন ব্যবস্থা অল্প সময়ের জন্য কার্যকর থাকে। কারণ ইঁদুর খাদ্য,পানি ও বাসস্থানের জন্য সবসময় স্থান পরিবর্তন করে থাকে। তাই পাড়া অথবা গ্রামের সবাই একযোগে ইঁদুর দমন করা প্রয়োজন। এতে প্রতিবেশির বাড়িতে ইঁদুরের আগমনের সম্ভাবনা কমে যায়। উপদ্রব ও ক্ষয়ক্ষতি কম রাখতে এবং সফলভাবে ইঁদুর দমন করতে হলে কমিউনিটির সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ একটি পাড়ার           কৃষকদের সাথে বসে উঠান সভার মাধ্যমে ইঁদুর দমনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। এক্ষেত্রে ঐপাড়ায় প্রতিটি বাড়িতে বিভিন্ন স্থানে ইঁদুরের গর্ত কতটি রয়েছে তার হিসাব করতে হবে। প্রতি গর্তে একটি করে ফসটক্সিন গ্যাস বড়ি প্রয়োগের জন্য ক্রয় করাতে হবে। সবাইকে নিয়ে তাদের দ্বারা গ্যাসবড়ি প্রয়োগ করাতে হবে। এদের একদিন দমন বিষয়ের উপকারিতা বুঝাতে হবে। ঘরের ইঁদুর দমনের জন্য প্রত্যেক বাড়ির জন্য ৩-৫টি কেচিকল বা তারের ফাঁদ ক্রয় করে একসাথে ব্যবহার করতে হবে।
গোলাজাত শস্যের ক্ষয়ক্ষতি রোধ
গোলাজাত শস্যের ক্ষতি ন্যূনতম ব্যয়ে উন্নত গোলা ব্যবহারের মাধ্যমে রোধ করা সম্ভব। বাঁশের তৈরি শস্যদানা গুদামের প্লাটফর্মে উপস্থাপন করা হয়, যেখানকার খুঁটি টিনের পাতা দিয়ে মুড়িয়ে প্রতিরোধ করা হয় যাতে ইঁদুর মাটি হতে গুদামটিতে আরোহন করতে না পারে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শস্যদানা গুদামটির ওপরের অংশ অবশ্যই সঠিক টেকসই আবরণ দ্বারা বন্ধ বা ঢেকে রাখতে হবে যাতে ঘরের দেয়াল অথবা ছাঁদ হতে ইঁদুর লাফ দিয়ে অথবা আরোহণ করতে না পারে এমন প্রতিরোধক সম্পন্ন করতে হবে। টিনের পাত অথবা অন্য ধাতব জিনিস দ্বারা বিদ্যমান গুদাম কাঠামোটির উপরি অংশ ভালোভাবে মুড়িয়ে দিতে হবে। পাশে ঝুলে থাকা প্রান্ত ইঁদুরকে আরোহণ বা উঠতে বিরত রাখবে।    
খড়ের গাদার ক্ষয়ক্ষতি রোধ
খড়ের গাদা ইঁদুরের অন্যতম নিরাপদ বাসস্থান, বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে। খড়ের গাদার নিচে গর্ত খুঁড়ে ও কেটেকুটে ১০-২০% খড় নষ্ট করে থাকে। এ খড় পশুকে খাওয়ালে ইঁদুরবাহিত রোগ দ্বারা পশু আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। খড়ের গাদা করার সময় মাচা বা মঞ্চ করে রাখলে ইঁদুরের ক্ষয়ক্ষতি হতে খড়কে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এতে খড়ের গুণগতমানও ভাল থাকবে। সাধারণত ৬০-৭০ সেন্টিমিটার উঁচু মাচা তৈরি করে খড়ের গাদা তৈরি করলে এবং মাচার নিচের অংশ সব সময় পরিষ্কার রাখলে ইঁদুরের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যায়।
আঁঠার ফাঁদ দ্বারা ইঁদুর দমন
বাজারে দোকানে ইঁদুর মারার আঠার তৈরি গ্লুবোর্ড বা আঠার ফাদ পাওয়া যায়। ইঁদুরের চলাচলের রাস্তায় পেতে রাখলে ইঁদুর আঠায় আটকা পড়ে যেতে পারে না। ইঁদুর আটকা পড়ার পর যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি তুলে মেরে ফেলতে হবে। কারণ দেরি হলে অন্যান্য ইঁদুর দেখে ফেলে ঐ স্থানে ইঁদুররা যাবে না। তাই একটা ইঁদুর ধরা পড়ার পর আঁঠার ফাঁদ একটু দূরে পাততে হবে। ঘরে একটি আঁঠার ফাঁদ ব্যবহার না করে ২-৩টি ফাঁদ ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
ইঁদুরভোজী প্রাণী পালন
বিড়াল ও কুকুর পালন করলে ইঁদুরের উপদ্রব কম থাকবে। বিড়ালকে রাতে কম খাবার দিতে হবে। ইঁদুরভোজী বেজি, গুইসাপ মারা যাবে না।
পরিশেষে ইঁদুর যেকোনো পরিবেশে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার কৌশল জানা স্তন্যপায়ী প্রাণী। একজন কৃষক বলেছেন, ইঁদুরকে মারতে হলে প্রযুক্তিগত দক্ষ ও স্মার্ট হতে হবে। সঠিক দমনপ্রযুক্তি সিলেকশন, সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে। একের অধিক দমন পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। সারা বছর ধরে সবাই মিলে ইঁদুর মারতে হবে। তবেই খাদ্যশস্য, সম্পদ ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি হবেনা। পাশাপাশি দেশ সমৃদ্ধিতে কৃষি দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে। য়

মুখ্য প্রশিক্ষক (অব.),  ডিএই, রূপায়নলোটাস ৬বি, ১৩ তোপখানা রোড, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৪২২২১৫৭
ই-মেইল :  Santoshsarker10@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon